
কিশোর কুমার (৪ আগস্ট ১৯২৯ – ১৩ অক্টোবর ১৯৮৭) ছিলেন ভারতীয় সংগীতজগতের এক অমর প্রতিভা। গায়ক, অভিনেতা, সুরকার, গীতিকার, পরিচালক এবং প্রযোজক হিসেবে তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তার কণ্ঠে ছিল এক অনন্য মাধুর্য, যা আনন্দ, প্রেম, বেদনা এবং জীবনের নানা অনুভূতিকে সমানভাবে ফুটিয়ে তুলত।
বলিউডে তিনি প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। “রূপ তেরা মস্তানা”, “মেরে সপনো কি রানী”, “জিন্দেগি এক সফর হ্যায় সুহানা” সহ অসংখ্য কালজয়ী গান আজও মানুষের হৃদয়ে অমর। তার গানের বৈশিষ্ট্য ছিল এক ভিন্নধর্মী কায়দা—গলাকে ভেঙে গাওয়া, যা তখনকার প্রধান দুই গায়ক মহম্মদ রফি ও মুকেশের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
কিশোর কুমার শুধুমাত্র গায়ক নন, বরং চলচ্চিত্র জগতে কমেডি ও রোমান্স চরিত্রেও সমান দক্ষ ছিলেন। “বাপ রে বাপ”, “চলতি কা নাম গাড়ি”, “হাফ টিকিট”, “পড়োশন” সহ বহু চলচ্চিত্রে তার অভিনয় দর্শক হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। তবে সবচেয়ে প্রিয় ছিল সঙ্গীত—অভিনয় তার কাছে ছিল কেবল একটি মাধ্যম।
বহুমুখী প্রতিভা
তিনি কেবল গায়ক হিসেবে সীমাবদ্ধ থাকেননি; সুরকার, গীতিকার এবং প্রযোজক হিসেবেও অসংখ্য কাজ করেছেন। রাহুল দেব বর্মন, শচীন দেব বর্মন, লক্ষ্মীকান্ত-পেয়ারেলাল এবং হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার সঙ্গীতযাত্রা স্মরণীয়। বাংলা ও হিন্দি উভয় ভাষার গানেও তিনি সমান দক্ষতা দেখিয়েছেন। রবীন্দ্রসঙ্গীতেও তার বিশেষ অবদান অমর—“এই কথাটি মনে রেখো”, “আমার পূজার ফুল”, “দিনের শেষে ঘুমের দেশে” সহ অনেক সংকলন অসংখ্য মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে।
ব্যক্তিগত জীবন ও পরিবার
কিশোর কুমারের চারটি বিয়ে হয়েছিল—রুমা গুহঠাকুরতা, মধুবালা, যোগিতা বালী এবং লীনা চন্দাভারকর। তার বড় ছেলে অমিত কুমারও গান জগতে কিছু সাফল্য পেয়েছেন। ছোট ছেলে সুমিত কুমারও সঙ্গীত জগতে চেষ্টা চালাচ্ছেন।
পরিবার এবং প্রিয়জনের সঙ্গে সম্পর্ক তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিশেষ করে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব ও সঙ্গীত সম্পর্ক গভীর এবং অনন্য ছিল। তিনি বাঙালি সংস্কৃতি ও খাদ্যভোগেও গভীরভাবে মগ্ন ছিলেন, প্রতিটি পুজোতে বাংলা গান এবং অ্যালবামের মাধ্যমে সংস্কৃতি উদযাপন করতেন।
উত্তরাধিকার
কিশোর কুমারের গান আজও অনন্য স্থান ধরে রেখেছে—বাংলা হোক বা হিন্দি, আধুনিক গান হোক বা রবীন্দ্রসঙ্গীত, তার কণ্ঠশিল্প এখনও মানুষের হৃদয়ে বেঁচে আছে। তার উদার মনোভাব, স্বতন্ত্র কণ্ঠ, এবং বহুমুখী প্রতিভা ভারতীয় সঙ্গীতের ইতিহাসে চির অম্লান ছাপ রেখেছে।
