Bangla Panjika 2025

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ (৫ নভেম্বর ১৮৭০ – ১৬ জুন ১৯২৫) ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাঙালি আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা সংগ্রামী, কবি ও লেখক। তিনি স্বরাজ্য পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত। সমাজ ও দেশের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা, মানবিকতা এবং দানশীলতা তাঁকে মানুষের হৃদয়ে “দেশবন্ধু” নামে অমর করে রেখেছে।

চিত্তরঞ্জন দাশের জন্ম ঢাকার বিক্রমপুরের তেলিরবাগ গ্রামের এক উচ্চ মধ্যবিত্ত বৈদ্যব্রাহ্মণ পরিবারে। তাঁর পিতা ভুবন মোহন দাশ ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের সলিসিটার, আর পরিবারের অন্য সদস্যরাও আইনপেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। জীবিকার কারণে পরিবারটি বিক্রমপুর থেকে কলকাতায় এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। তাঁর কাকা দুর্গা মোহন দাশও ছিলেন একজন আইনজীবী।

শিক্ষাজীবনে তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে বিএ এবং বার-অ্যাট-ল ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীকালে তিনি আইনপেশায় যোগ দেন এবং দ্রুতই দক্ষতা ও মেধার পরিচয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।

কলকাতা হাইকোর্টে ব্যারিস্টার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন চিত্তরঞ্জন দাশ। অরবিন্দ ঘোষের মামলায় তাঁর সাফল্য তাঁকে সবার কাছে পরিচিত করে তোলে। তিনি এমন দক্ষতার সঙ্গে মামলাটি পরিচালনা করেন যে অরবিন্দ ঘোষ শেষ পর্যন্ত মুক্তি পান।
পরে তিনি ঢাকা ষড়যন্ত্র মামলায় বিবাদী পক্ষের পক্ষে কৌশলী হিসেবে কাজ করেন। দেওয়ানী ও ফৌজদারী উভয় ক্ষেত্রেই তাঁর পারদর্শিতা ছিল অনন্য। তিনি ব্যাঙ্গল প্যাক্টের প্রবক্তা হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক আদর্শে গঠিত হয় স্বরাজ্য পার্টি, যা স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

চিত্তরঞ্জন দাশ ছিলেন বাংলার অনেক বিশিষ্ট নেতার রাজনৈতিক গুরু। সুভাষচন্দ্র বসু, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বিধানচন্দ্র রায়, শরৎচন্দ্র বসু ও যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত— এই সকল নেতার রাজনৈতিক চিন্তা ও আদর্শে তাঁর গভীর প্রভাব ছিল।

চিত্তরঞ্জন দাশের মৃত্যুর পর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখেছিলেন—

“এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ,
মরণে তাহাই তুমি করে গেলে দান।

কাজী নজরুল ইসলামও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে চিত্তনামা নামের কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন, যা উৎসর্গ করা হয় চিত্তরঞ্জন দাশের স্ত্রী বাসন্তী দেবীকে। এই গ্রন্থের কবিতাগুলিতে যেমন ‘অর্ঘ্য’, ‘অকাল-সন্ধ্যা’, ‘স্বান্তনা’ ও ‘রাজভিখারি’— তাঁর ব্যক্তিত্ব ও মানবিকতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ পেয়েছে।

home3