
ক্ষুদিরাম বসু (৩ ডিসেম্বর ১৮৮৯ — ১১ আগস্ট ১৯০৮) ছিলেন একজন ভারতীয়-বাঙালি বিপ্লবী যিনি ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে সংগ্রাম করেছিলেন। কৈশোর থেকেই তাঁর মধ্যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদী মনোভাব ছিল এবং তিনি সেই সময়কার বৈপ্লবিক আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতেন।
বিপ্লবী জীবনের শুরু
- মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি অনুশীলন সমিতির একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ শুরু করেন।
- শুরুর দিকে তিনি ভারতে ব্রিটিশ-বিরোধী পুস্তিকা বিলির অপরাধে গ্রেপ্তার হন।
- মেদিনীপুরে তাঁর বৈপ্লবিক জীবনের অভিষেক ঘটে। জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসু এবং রাজনারায়ণ বসুর প্রভাবে গড়ে ওঠা একটি গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠনে তিনি যোগ দেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি তার সাহস ও ঐকান্তিকতার জন্য সবার চোখে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন।
কিংসফোর্ডকে হত্যার প্রচেষ্টা
- আলিপুর প্রেসিডেন্সি বিচারালয়ের মুখ্য হাকিম কিংসফোর্ড তাঁর কঠোর ও নিষ্ঠুর বাক্য প্রয়োগ এবং নবীন রাজনৈতিক কর্মীদের শারীরিক নির্যাতনের সাজার জন্য জাতীয়তাবাদীদের কাছে কুখ্যাত ছিলেন।
- বারীন্দ্রকুমার ঘোষ এবং হেমচন্দ্র কানুনগো কিংসফোর্ডকে তাঁদের পরবর্তী লক্ষ্য হিসেবে স্থির করেন।
- কিংসফোর্ডকে হত্যা করার জন্য ক্ষুদিরাম বসু এবং প্রফুল্ল চাকী একটি পরিকল্পনায় যুক্ত হন।
- ১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল রাতে তাঁরা মুজাফফরপুরে ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনে কিংসফোর্ডের গাড়ি ভেবে অন্য একটি গাড়িতে বোমা নিক্ষেপ করেন। দুর্ভাগ্যবশত, ওই গাড়িতে কিংসফোর্ড ছিলেন না; এতে মিসেস কেনেডি ও তাঁর কন্যা নিহত হন।
গ্রেপ্তারি ও অবিচলতা
- ঘটনার পর প্রফুল্ল চাকী গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য আত্মহত্যা করেন, কিন্তু ক্ষুদিরাম বসু ওয়াইনি স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার হন।
- দুই ব্রিটিশ মহিলাকে হত্যার দায়ে তাঁর বিচার শুরু হয় এবং চূড়ান্তভাবে তাঁর ফাঁসির আদেশ হয়।
- তাঁর বিচার চলাকালীন এবং ফাঁসির মঞ্চে ওঠার সময়েও তাঁর মুখে ছিল হাসির রেখা এবং অবিচল দৃঢ়তা।
- বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু তাঁর স্বল্পকালীন জীবনের বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডের জন্য ভারতের কনিষ্ঠতম বিপ্লবী হিসেবে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। তাঁর আত্মত্যাগ সেই সময়কার স্বাধীনতা আন্দোলনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল।
