চারি যুগে চারি ধর্ম জীবের কারণ, কলি যুগের ধর্ম হয় ‘‘নাম সংকীর্তন”। সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর, কলি চারটি যুগের চারটি ধর্মের আশ্রয় গ্রহণ করে জীব উদ্ধার লাভ করে। সত্যযুগে ধ্যান, ত্রেতা যুগে যোগ্য দ্বাপর যুগে অর্চন এবং কলিযুগে হরিনাম সংকীর্তন। হরিনাম সংকীর্তন বলতে হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র কে বুঝায়। এখন অনেকের মনে প্রশ্ন- হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র কথার অর্থ কি সেটাই আজকের আলোচনার বিষয়।

হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্রটি ৩টি শব্দ দ্বারা গঠিত । শব্দ ৩টি হচ্ছে যথাক্রমে —
(১) হরে
(২) কৃষ্ণ
(৩) রাম
এই শব্দ তিনটি আসলে কী নির্দেশ করে?
১. “হরে” শব্দটি সংস্কৃত “হরা” শব্দ থেকে এসেছে যা দ্বারা শ্রীমতি রাধারাণীকে সম্বোধন করা হয় । রাধারাণী ভগবানের পরম আনন্দময়ী শক্তি । সৃষ্টির আদিতে পরমেশ্বর ভগবান তার নিজের সেবা ও ভক্তসঙ্গ লাভের জন্য শ্রীমতি রাধারাণীকে তার হৃদয়ের বামপাশ থেকে সৃষ্টি করেছেন । কাজেই রাধারাণীর অনুমতি ব্যাতীত কোন মানুষ এমনকি দেবতারাও ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে লাভ করতে পারে না ।
২. “কৃষ্ণ” শব্দ দ্বারা সর্বাকর্ষক শ্রীকৃষ্ণকে অর্থাৎ পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে বোঝায় । তিনিই সর্বপ্রথম এবং সর্বাদিরূপ । তিনিই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন , তাকে কেউ সৃষ্টি করেনি ।
৩. “রাম” শব্দ দ্বারা সর্ব আনন্দদায়ক শ্রীমান “বলরামকে” বোঝায় । বলরাম বৃন্দাবনে সবার অন্তরে আনন্দ সঞ্চার করেন । বলরামকে আমরা ভগবানের লীলা অবতাররূপেও দেখতে পাই ।
অতএব, হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্রের সঠিক অর্থ হচ্ছেঃ
হে সর্বাকর্ষক পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, হে সর্বানন্দদায়ক ভগবান শ্রীবলরাম, আপনারা আমাকে কৃপাপূর্বক আপনাদের চিন্ময় জগতের প্রেমময়ী সেবায় নিয়োজিত করুন ।
কলি যুগে কৃষ্ণনাম ব্যাতীত জীব কখনোই ভগবত ধাম লাভ করতে পারে না । শিশু মাতৃক্রোড়ের জন্য যেভাবে ব্যাকুল সুরে কান্না করে ,তেমনি আমরাও যদি ব্যাকুল চিত্তে ভগবানের কীর্তন করি তাহলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাদেরকে অবশ্যই কৃপা করবেন।
হরের্ণাম হরের্ণাম হরের্ণামৈব কেবলাম্।
কলৌ নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব গতিরন্যথা।।
অর্থৎ ,কলি যুগে হরি নাম ছাড়া গতি নাই, গতি নাই, গতি নাই। এই কলিকালে হরিনাম ছাড়া আর কোন গতি নাই। এই নাম নিলে আমাদের আত্মার মাঝে এক পরম শান্তি নেমে আসে তাই আপনারা হরি নামের আশ্রয় গ্রহণ করুন এবং সংসার রূপ কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আলয় গোলকধাম বৃন্দাবনে অর্থাৎ আমাদের প্রকৃত আলোয়ে ফিরে যান।
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে ।
হরে রাম হরে রাম, রাম রাম হরে হরে ।