Bangla Panjika 2025

দেশের প্রথম হাইড্রোজেন ট্রেন তৈরি হয়ে গেছে। রেলের নতুন এই সবুজ অধ্যায় শুরু হয়েছে দিল্লির শাকুরবস্তি ইয়ার্ড থেকে, যেখানে বগি-সহ পুরো ট্রেনটি পরীক্ষার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। অন্যদিকে, হরিয়ানার জিন্দে হাইড্রোজেন প্ল্যান্টে রিসার্চ ডিজাইন অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অর্গানাইজেশন ট্রেনের নিরাপত্তা ও পারফরম্যান্স সংক্রান্ত পরীক্ষা সম্পন্ন করছে। এরপর রেলের আরেকটি ইউনিট চূড়ান্ত পরীক্ষা করবে। সব কিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চললে, অক্টোবরের শেষেই এই হাইড্রোজেন ট্রেন দেশের রেলপথে ছুটতে শুরু করবে।

প্রথম পর্যায়ে ট্রেনটি চলবে সোনিপত–গোহানা–জিন্দ রুটে। প্রায় ৮৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রুটে চলবে আট বগির এই অত্যাধুনিক ট্রেন, যার গতি ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। একবারে ২,৬৩৮ জন যাত্রী এতে ভ্রমণ করতে পারবেন। রেল মন্ত্রণালয়ের অনুমান অনুযায়ী, এই প্রকল্পের মোট ব্যয় প্রায় ১২০ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে এই ‘নমো গ্রীন রেল’-এর বিশেষত্ব তুলে ধরে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন।

জিন্দে তৈরি হাইড্রোজেন প্ল্যান্ট থেকেই ট্রেনের জ্বালানি সরবরাহ হবে। প্রতিদিন সেখানে ৪৩০ কিলোগ্রাম হাইড্রোজেন উৎপাদনের ব্যবস্থা রয়েছে। প্ল্যান্টটিতে রয়েছে ৩,০০০ কিলোগ্রাম হাইড্রোজেন সংরক্ষণের ট্যাঙ্ক, কমপ্রেসর এবং দ্রুত জ্বালানি ভরার জন্য প্রি-কুলার ইন্টিগ্রেটেড দুইটি ডিসপেনসার। এই সম্পূর্ণ ব্যবস্থাই ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি হয়েছে, যা দেশকে আত্মনির্ভরতার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

এই ট্রেনের সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হলো, এতে বিদ্যুৎ বা ডিজেলের কোনও প্রয়োজন নেই। হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল প্রযুক্তির মাধ্যমে এটি চলে, ফলে কার্বন নিঃসরণ সম্পূর্ণ শূন্য। ট্রেন চলার সময় নির্গত হয় কেবল জলীয় বাষ্প ও তাপ—অর্থাৎ দূষণহীন, পরিবেশবান্ধব চলাচল। তুলনামূলকভাবে এই ট্রেন ডিজেল ইঞ্জিনের থেকে অনেক বেশি শক্তি সাশ্রয়ী এবং কম শব্দে চলে, ফলে যাত্রীদের জন্য ভ্রমণ আরও আরামদায়ক হবে।

এখন পর্যন্ত অন্যান্য দেশে ৫০০ থেকে ৬০০ হর্সপাওয়ারের হাইড্রোজেন ট্রেন তৈরি হলেও, ভারত এতে তৈরি করেছে ১,২০০ হর্সপাওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিন—যা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী হাইড্রোজেন ট্রেন ইঞ্জিনের মধ্যে অন্যতম। আট বগির এই ট্রেনটি বিশ্বের দীর্ঘতম হাইড্রোজেন ট্রেনগুলোর একটি হতে চলেছে।

রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই হাইড্রোজেন ট্রেন ভবিষ্যতে পাহাড়ি ও ঐতিহ্যবাহী রুটে বিশেষভাবে কার্যকর প্রমাণিত। এটি শুধুমাত্র ভারতের পরিবেশবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থার এক নতুন যুগের সূচনা নয়, বরং ‘সবুজ বিপ্লব’-এর পথে রেল বিভাগের অন্যতম গর্বের পদক্ষেপও বটে। এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের পর ভারত হবে বিশ্বের অল্প কয়েকটি দেশের মধ্যে একটি, যারা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হাইড্রোজেন ট্রেন পরিচালনা করতে সক্ষম। অর্থাৎ, এ শুধু একটি ট্রেন নয়—এ ভারতের সবুজ প্রযুক্তি ও আত্মনির্ভরতার গতির প্রতীক।

source – banglahunt.com

home3